
সারাদিন বাইরে ঘোরাঘুরি, অফিসের পথে হাঁটাহাঁটি কিংবা সমুদ্রসৈকতের ছুটিতে রোদপান—সব মিলেই হাসিমুখেই ফিরলেন। কিন্তু বাড়ি পৌঁছে আয়নায় তাকাতেই চমকে উঠলেন—ঠোঁট লালচে, ফোলা, জ্বালাপোড়া করছে, স্পর্শ করলেই ব্যথা। অনেকেই ভেবে নেন, সাধারণ সানবার্ন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঠোঁটে রোদে পোড়া দেখা দিলে তা অনেক সময় ‘সান পয়জনিং’–এর লক্ষণ হতে পারে।
সময়মতো যত্ন না নিলে, এর প্রভাব শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া’তে অবস্থিত ‘লা হোইয়া ডার্মাটোলজি অ্যান্ড লেজার সেন্টার’য়ের ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. আজাদেহ শিরাজি দ্য স্কিম ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, 'ঠোঁটের ত্বক খুবই পাতলা এবং এতে প্রতিরক্ষামূলক রঞ্জক বা মেলানিন তুলনামূলকভাবে কম থাকে। তাই সূর্যের আলোয় এটি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'চকচকে লিপ বাম বা গ্লস ব্যবহার করলে সমস্যা আরও বাড়ে, কারণ উজ্জ্বল পৃষ্ঠ সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে তাপমাত্রা ও ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।'
ঠোঁটে সূর্যদগ্ধতার লক্ষণ
ডা. শিরাজির মতে, 'ঠোঁটে সূর্যদগ্ধতা সাধারণত রোদে থাকার ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর স্পষ্ট হয়। এটি শরীরের অন্যান্য অংশে হওয়া রোদে পোড়ার মতোই হলেও ঠোঁটের ত্বক বেশি সংবেদনশীল হওয়াতে ব্যথা ও অস্বস্তি দ্রুত বাড়ে।'
এই সমস্যার সাধারণ লক্ষণগুলো হল- লালচে রং ও ফোলা ভাব, তীব্র জ্বালাপোড়া বা স্পর্শে ব্যথা, চামড়া উঠে যাওয়া বা ফোসকা পড়া।
আরও গুরুতর ক্ষেত্রে শরীরজুড়ে দেখা দিতে পারে লক্ষণ। এর মধ্যে রয়েছে- পানিশূন্যতা, বমিভাব বা মাথা ঘোরা, বিভ্রান্তি বা দুর্বল লাগা, শ্বাসকষ্ট বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া পর্যন্ত উপসর্গ।
সমস্যা মারাত্মক আকারে হলে ঠোঁটের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দেখা যায় ফোস্কা ও তরলভর্তি দাগ, ব্যথার কারণে খাওয়া-দাওয়া বা কথা বলতে অসুবিধা, ত্বক শুকিয়ে খোসা ওঠা, চুলকানি ও খসখসে ভাব।
ঘরোয়া উপায়ে প্রাথমিক যত্ন
যদি সমস্যা খুব বেশি গুরুতর না হয় তাহলে ঘরোয়া কিছু উপায়েই প্রাথমিক চিকিৎসা করা যায়।
রোদ থেকে দূরে: প্রথমেই রোদে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। ছায়াযুক্ত বা ঠাণ্ডা স্থানে চলে যেতে হবে।
প্রচুর পানি পান: রোদে পোড়া ত্বক শরীর থেকে পানি শোষণ করে নেয়। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করে শরীরকে আর্দ্র রাখতে হবে। ঠোঁট ব্যথা করলেও ধীরে ধীরে ছোট ছোট চুমুকে পানি পান করা জরুরি।
ঠাণ্ডা ভাপ দেওয়া: বরফ সরাসরি ঠোঁটে না দিয়ে কাপড় দিয়ে মোড়া ঠাণ্ডা প্যাক ব্যবহার করতে হবে। এতে ফোলা ও ব্যথা কমবে। প্রতিবার ২০ মিনিট ধরে ভাপ দেওয়া প্রয়োজন। তারপর ২০ মিনিট বিরতি নিতে হবে।
জীবাণুনাশক ব্যবহার: সূর্যদগ্ধ ঠোঁটে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তাই ত্বকের জন্য নিরাপদ, অ্যালকোহলবিহীন জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করা যায়। এতে জীবাণু সংক্রমণ রোধ হয় এবং ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে আসে।
অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার: অ্যালোভেরা হল সূর্যদগ্ধ ত্বকের অন্যতম প্রাকৃতিক আরামদায়ক উপাদান। ঠাণ্ডা করা অ্যালোভেরা জেল ঠোঁটে আলতোভাবে লাগালে ব্যথা ও জ্বালাভাব কমে। চাইলে অ্যালোভেরা-ভিত্তিক ঠোঁটের মলমও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ব্যথানাশক গ্রহণ: অতিরিক্ত ব্যথা বা ফোলাভাব থাকলে সাধারণ ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
ঠোঁট আর্দ্র রাখা: ক্ষত শুকোতে শুরু করলে ঠোঁটে নিরাময়কারী বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগানো শুরু করা উচিত। এটি ত্বকের ওপর সুরক্ষার স্তর তৈরি করে আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।
ফোস্কা না ভাঙা: ঠোঁটে ফোসকা পড়লে তা ভাঙা বা খোসা টানা বিপজ্জনক, এতে সংক্রমণ হতে পারে। তাই একদম স্পর্শ না করাই ভালো।
প্রতিরোধের উপায়
ঠোঁটে সূর্যদগ্ধতা প্রতিরোধ করা সহজ, যদি কিছু নিয়ম মেনে চলা যায়।
- রোদ-রোধী লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, কমপক্ষে এসপিএফ ৩০ যুক্ত বাম ব্যবহার করা উচিত।
- চকচকে বা তেলতেলে লিপ প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলো সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে ঠোঁটে অতিরিক্ত তাপ জমায়।
- চওড়া কিনারাওয়ালা টুপি মুখ ও ঠোঁটকে ছায়া দেয়, ফলে সরাসরি সূর্যালোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- লিপ বাম বা সানস্ক্রিন প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর পুনরায় ব্যবহার করতেই হবে।
যখন চিকিৎসকের কাছে যেতে-ই হবে
যদি ঠোঁট-পোড়ার সাথে শরীরে জ্বর, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বমি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কারণ এটি কেবল ত্বকদগ্ধতা নয় বরং ‘সান পয়জনিং’। যে কারণে শরীরে পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইটস’য়ের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।





