'দুজনেই চাকরি, কিন্তু সব কাজ আমার!'—দাম্পত্যে সমতার শুরু কথার মাধ্যমে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিষয়:

অবসাদ, রাগ, আর মানসিক ক্লান্তি যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে যায় যখন দুজনই কর্মজীবী, তবে ঘরের কাজের ভার একজনের ওপর থাকলে। ছবি: সংগ্রহীত

দুজনই কর্মজীবী, তবে ঘরের কাজের ভার পড়ছে একজনের ওপর- এমন অবস্থা অনেকেই কাছেই নতুন নয়। শুধু তাই নয়, ঘরের কাজের মানসিক চাপ, যেমন- কোন দিন বাজার করতে হবে, কোন বন্ধুকে জন্মদিনে উপহার দিতে হবে বা সন্তানের স্কুলের নোটিশ সময়মতো দেখা এসবও নারীদেরই মনে রাখতে হয়।

তাই অবসাদ, রাগ, আর মানসিক ক্লান্তি যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে যায়। তবে আশা আছে। অপেক্ষা না করে, এখনই কথায় আনা যায় পরিবর্তন।

সঙ্গীর সঙ্গে আলোচনায় আনতে হবে দায়িত্ব ভাগের বিষয়টি। কারণ ভালোবাসার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এটি যেমন জরুরি, তেমনি পরিবারের ভারসাম্যের জন্যও অতি প্রয়োজনীয় ।

প্রথম ধাপ: নিজের কাজের হিসাব

অনেকেই ভাবেন ঘরের কাজ দু’জনেই করি। তবে বাস্তবে কে কতটা সময় দিচ্ছে, তা জানা দরকার।

দ্য স্কিম ডটকম–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মায়েরা গড়ে ৭১ শতাংশ ‘মানসিক শ্রম’ (যেমন- পরিকল্পনা করা, সংগঠিত করা) এবং ৭৯ শতাংশ দৈনন্দিন কাজ (যেমন- পরিষ্কার করা, শিশুর যত্ন) করেন।

ঝগড়া না করে সংসারে কাজের দায়িত্ব ভাগ নেওয়ার কৌশলগুলো জানা প্রয়োজন
ঝগড়া না করে সংসারে কাজের দায়িত্ব ভাগ নেওয়ার কৌশলগুলো জানা প্রয়োজন

কীভাবে বুঝবেন কতটা দিচ্ছেন?

“একদিন ধরে নিজের সব কাজ লিখে ফেলতে হবে”- পরামর্শ দেন ‘দি স্কিম ডটকম’য়ের সম্পর্ক-বিষয়ক লেখক মেলিসা গোল্ডবার্গ।

“ছোট বা বড়, দৃশ্যমান বা অদৃশ্য সবকিছুই। যেমন- সকালের নাশতা বানানো, স্কুল ব্যাগ গোছানো, বিদ্যুৎ বিল দেওয়া, এমনকি পারিবারিক বার্তা মনে করিয়ে দেওয়া পর্যন্ত”- বলেন গোল্ডবার্গ।

এরপর তালিকা দেখে বুঝতে হবে- কোন কাজগুলো সবচেয়ে বেশি চাপ দিচ্ছে, কোনগুলো করতে ভালো লাগে, আর কোনগুলো আপনি ছাড়া কেউ করতে পারে না।

সবশেষে নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে- ‘এটা করা কি সত্যিই দরকার?’ নাকি কেবল সামাজিক প্রত্যাশা বা অভ্যাসের কারণে করছেন? এতে নিজেই বুঝতে পারবেন কোন কাজ বাদ দেওয়া যায়, কোনটিতে সাহায্য নেওয়া যায়।

দ্বিতীয় ধাপ: সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা

যে কোনো সম্পর্কের মতো ঘরের দায়িত্বেও যোগাযোগই মূল উপাদান। তবে আলোচনা করতে হলে সময় ও পরিবেশ দুটোই শান্ত হতে হবে।

যেভাবে শুরু করা যায়

মেলিসা বলেন, “প্রথমেই প্রশংসা দিয়ে শুরু করতে হবে। বলতে হবে, ‘তুমি বাচ্চাদের গোসল করিয়ে দাও, সেটা আমি সত্যিই মন দিয়ে ধন্যবাদ দেই।’ এতে সঙ্গী সহযোগিতার জায়গায় আগ্রহী হবেন।”

এরপর নিজের তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। সঙ্গীকে বলতে হবে, ‘আমি হিসাব করেছি, সপ্তাহে এত ঘণ্টা রান্না, এত ঘণ্টা পরিষ্কার আর এত ঘণ্টা শিশুর যত্নে যাচ্ছি। এতে আমার বিশ্রামের সময় থাকে না।’

এছাড়া ‘আমি’ দিয়ে কথা বলতে হবে, ‘তুমি’ দিয়ে নয়। যেমন- ‘তুমি কখনও বাসন পরিষ্কার কর না’- এটা না বলে বলুন, ‘আমি খুব চাপ অনুভব করি যখন বাসন জমে থাকে।’

আবার সঙ্গীর কথাও শুনতে হবে। হয়ত তিনি বলবেন, ‘আমি ঠিকমতো পারি না’ বা ‘আমি তো ঘর পরিষ্কার করি।’

উত্তেজিত না হয়ে তখন শান্ত থাকতে হবে। কারণ লক্ষ্য হল, দোষ নয় সমাধান খোঁজা। আর এভাবেই পথ নির্ধারণ করতে হবে। এ সময়ে বলা যেতে পারে, ‘আগামী সপ্তাহে বসে কাজ ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে পারি?’ এইভাবে ধীরে ধীরে সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়।

তৃতীয় ধাপ: কাজ ভাগের বাস্তব পরিকল্পনা

আলোচনার পর এবার আসবে কর্মপরিকল্পনা। একসঙ্গে সব কাজের তালিকা করতে হবেন। ঘরের দৃশ্যমান (রান্না, কাপড় ধোয়া) ও অদৃশ্য (সময়সূচি ঠিক করা, ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট) সব লিখে ফেলতে হবে।

অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিতে হবে। হয়ত প্রতিদিন বিছানা গোছানোর দরকার নেই, বা প্রতি সপ্তাহে গাছের টব পাল্টানোও নয়।

মেলিসা বলেন, “তালিকা থেকে যা ভালো লাগে, তা নিন। যেমন- একজন রান্না পছন্দ করেন, আরেকজন কাপড় ভাঁজ করতে। তাহলে কাজ ভাগ হতে হবে আগ্রহ অনুযায়ী।”

যা দু’জনেই অপছন্দ করেন, তা ঘুরিয়ে করতে হবে। এক সপ্তাহ একজন, পরের সপ্তাহে অন্যজন।

নির্দিষ্ট মান নির্ধারণ করা জরুরি- ‘সন্তানের ঘুমের সময় রাত ৮টার মধ্যে শেষ’ বা ‘রান্নার পর রান্নাঘর পরিষ্কার থাকবে’ এভাবে স্পষ্টভাবে বলতে হবে।

প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া বেশ উপকারী হবে। ক্যালেন্ডার বা টু-ডু অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে যাতে কে কখন কী করবে তা দু’জনেই জানেন।

চতুর্থ ধাপ: দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের কৌশল

সব কিছু একদিনে বদলাবে না। তাই সাপ্তাহিক ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় রেখে নিয়মিত আলোচনা করা উচিত। জানতে হবে কী কাজ হচ্ছে, কোথায় সমস্যা।

তিনটি সাধারণ সমস্যা ও সমাধান

  • নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা কমানো দরকার। সঙ্গী নিজের মতো কাজ করলে একটু ভিন্ন হতে পারে। তবে যদি ফল ঠিক থাকে, সেটাই সাফল্য।
  • ধৈর্য ধরতে হবে। অভ্যাস বদলাতে সময় লাগে। চাইলে ঘরে দৃশ্যমান ‘চেকলিস্ট’ ঝুলিয়ে রাখা যায়।
  • পরিস্থিতি অনুযায়ী নমনীয় হতে হবে। কাজের চাপ বা সফর থাকলে দায়িত্ব সাময়িকভাবে পরিবর্তন করা যেতে পারে।

যে কারণে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ

ঘরের কাজ কেবল শারীরিক নয়, মানসিক শ্রমও বটে। ভারসাম্যহীন দায়িত্ব সম্পর্ককে ক্লান্ত করে, ভালোবাসাকে ক্ষীণ করে। দায়িত্ব ভাগ মানে ভালোবাসা ভাগ যেখানে দু’জনেই স্বস্তি ও সম্মান পায়।

অর্থাৎ অপেক্ষা করার পরেও যদি সঙ্গী নিজের থেকেই দায়িত্ব বুঝে না নেন এবং এটি হতেই পারে। তাহলে আলোচনাই হল প্রথম ধাপ।

বিষয়:

বিজ্ঞাপন